গাইনি ও অবস বিভাগ
গাইনি ও অবস এর পূর্নাঙ্গ রূপ হলো Gynaecology and Obstetrics অর্থ স্ত্রীরোগবিদ্যা এবং ধাত্রীবিদ্যা . এই শাখাটির প্রধান বিষয়াবলী হল নারীর প্রজনন অঙ্গের স্বাস্থসেবা ,রোগ নির্ণয় ও প্রজনন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত চিকিৎসাসেবা . এ সব রোগ এর চিকিৎসা মূলত অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে করা হয় থাকে.
গাইনি বিভাগ হচ্ছে স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের স্বাস্থসেবা ও রোগের চিকিৎসা সম্পর্কিত শাখা .এই তন্ত্রের অন্তর্গত বিভিন্ন অঙ্গাদি ও রোগ এর ক্ষেত্রগুলি হলো —
* ভ্যাজাইনা ও জরায়ু এর টিউমার এবং ক্যান্সার
* ডিম্বাশয় এর সিস্ট ও ক্যান্সার
* ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার ও টিউমার
অবস বিভাগে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত তা হচ্ছে —
* গর্ভধারণ
* গর্ভকালীন শারীরিক অসুবিধা
* ইন্টার কারেন্ট ডিজিস ইন প্রেগনেন্সি
* প্রসব বা শিশু জম্নদান
* প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ
* প্রসবোত্তর সময়ের বিভিন্ন সমস্যা
* আল্ট্রাসনোগ্রাফী
যে সমস্ত চিকিৎসা সেবা গাইনি ও অবস বিভাগ থেকে দিয়ে থাকে সেসব হল —
১. প্রজনন গ্রন্থি এন্ডোক্রাইনোলজি এবং হরমোন সংক্রান্ত
২. বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা
৩. প্রসূতি মায়ের বিভিন্ন রোগ এর চিকিৎসা
৪. প্রজনন অঙ্গের ক্যান্সার
৫. শ্রোণিদেহের পুনর্গঠন সংক্রান্ত চিকিৎসা ও সার্জারি
৬. পরিবার পরিকল্পনা
৭. ঋতুস্রাব সংক্রান্ত জটিলতা
৮. মেনোপজ পরবর্তী সমস্যা
৯. ডিম্বাশয় এর ইনফেকশন ও সিস্ট এবং ক্যান্সার
১০. জননাঙ্গের বিভিন্ন অংশের টিউমার
অর্থপেডিক্স
অর্থোপেডিক্স বা অর্থোপেডিক্স সার্জারি হলো এক ধরনের অস্ত্রোপাচার সম্পর্কিত চিকিৎসা শাখা যা হাড় ও পেশী তথা কঙ্কালতন্ত্র এর সঙ্গে জড়িত। অর্থোপেডিক সার্জনরা এই চিকিৎসাটি অস্ত্রোপাচার ছাড়া কিংবা অস্ত্রোপাচার এর সাহায্যে করে থাকেন। এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, মেরুদণ্ডের রোগ, ক্রীড়া আঘাত, ডিজেনেরেটিভ রোগ, সংক্রমণ, টিউমার, এবং জন্মগত রোগ এই শাখার আওতাধীন।
এ ছাড়া ও এটি যেসব রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে তা হল –
– স্পাইন বা মেরুদন্ড এর রোগ
– স্পোর্টস /খেলাধুলা সম্পর্কিত আঘাত
– ডিজেনেরেটিভ
– ইনফেকশন
– টিউমার
– কনজেনিটাল ডিজঅর্ডার
প্রথম দিকে অর্থোপেডিক বাচ্চাদের কঙ্কালতত্রন্ত্র এর ত্রুটি সংশোধন এর কাজ করতো। পরবর্তী তে University of Paris থেকে একজন ফ্রেঞ্চ প্রফেসর Nicolas Andre ১৭৪১ প্রথম এই বিষয় নিয়ে বই লিখেন। বর্তমানে এই শাখার ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়েছে। যেসব চিকিৎসা দেয়া হয় তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো :
– যে কোনো ধরণের ফ্রাকচার বা হাড় ভাঙা
– হিপ রিপ্লেসমেন্ট
– হাটু প্রতিস্থাপন
– জায়েন্ট এর সমস্যা
– আর্থরাইটিস
– এক্সটার্নাল ফিক্সেশন
– কাঁধ এর সার্জারি
– গোড়ালি এবং কনুই এর সার্জারি
– স্কাল বা খুলি সার্জারি
– অর্থোপেডিক সার্জারি
– স্পাইন বা মেরুদন্ড সার্জারি
– পেডিয়াট্রিক
– মাস্কুলো স্কেলেটাল অন্কলোজি
– অর্থোপ্ল্যাস্টি
– হাত এবং পা ভাঙ্গা
ডেন্টাল বিভাগ
ডেন্টাল বিভাগে দাঁতের গঠন , সব ধরণের স্বাস্থসেবা ,রোগ ও তার চিকিৎসা প্রদান করে থাকে . দাঁতের চিকিৎসক দের ডেন্টিস্ট বলে .দাঁতের বিভিন্ন রকম রোগ হতে পারে যেমন —
*দাঁত এর ব্যাথা
*দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া
* দন্তমূলে ব্যাথা
* দাঁত উঠানো
* কৃত্তিম দাঁত প্রতিস্থাপন
* ইনফেকশন
* দাঁত এর গর্ত ভরাট
*ভাঙা ও অসমান দাঁত ঠিক করা ইত্যাদি
অর্থাৎ ডেন্টাল বিভাগে দাঁতের বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা , রোগের প্রতিরোধ করা বা আক্রমণ রোধ করা, রোগ নির্মূল করা ,প্রতিকার করা এবং দাঁতের অন্যান্য যেকোনো সমস্যার সমাধান করাই ডেন্টাল বিভাগের কাজ .
ডেন্টাল বিভাগ কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় . যথা —
১) এনডোডোন্টিক(Endodontic) :
এই শাখা দাঁতের গোড়ার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা করে থাকে . যেমন —
– রুট ক্যানাল
– ভাঙা দাঁতের চিকিৎসা
– দাঁতের পুডিং বা প্লাস্টার
– দাঁতের ব্যাথা
– দাঁতের রক্তক্ষরন
– দাঁতের ক্ষতিগ্রস্থ কোষ বা টিস্যু
– গোড়ায় ইনফেকশন
২) প্রসথোডনটিক(Prosthodotic) :
এই শাখা তে দাঁতের উপরিভাগ তথা দৃশ্যমান অংশের বিবিধ সমস্যা ও তার প্রতিকার করে থাকে .যেমন —
– দাঁতের এনামেল বা আবরণ ক্ষতিগ্রস্থ হলে ঠিক করা
– বাঁকা দাঁতকে সোজা করা, উঁচুনিচু দাঁত ঠিক করা
– আঁকাবাঁকা সারিকে সারিবদ্ধ করে সাজানো
– পড়ে যাওয়া দাঁতের ফাঁকা স্থানে নতুন কৃত্তিম দাঁত স্থাপন
– আংশিক বা পুরো দাঁতের মাড়িসহ প্রতিস্থাপন
৩) অর্থোডনটিক(Orthodotic) :
এ বিভাগের অতর্ভুক্ত বিষয়সমূহ :-
– দাঁতের মাড়ির গঠনের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা
– রোগাক্রান্ত ,সমস্যা কবলিত দাঁত তুলে ফেলা
– অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত দাঁত অপসারণ
– দাঁতের চারপাশের ফাইবার এর পুনর্জন্ম রোধ করা
– দাঁতের ক্লিনিং
নিউরোলজি
নিউরোলজি শব্দটি neuro বা নিউরোন থেকে এসেছে যার অর্থ স্নায়ু। Neurology Department স্নায়ুর এবং মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা এবং রোগ এর চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। এটি স্নায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা, স্নায়ুবৈকল্য, স্নায়বিক রোগ নির্ণয় ও তার প্রতিকার করে।
নিউরোলজি কেন্দ্রীয় স্নায়বিক প্রক্রিয়া বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ও এর কার্যক্রম, কার্যপ্রক্রিয়া এবং তার স্বাভাবিক থেকে যেকোনো বিচুত্যির কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে কাজ করে। এছাড়াও পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ও স্নায়ু আবরণ, রক্তনালী, টিস্যুর সমস্যাও এই শাখার আওতাভুক্ত।
নিউরোলজি বিভাগের প্রধান ও উল্লেখ যোগ্য রোগ সমূহ :
– স্নায়ুবৈকল্য
– মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরন
– মাথাব্যথা
– স্ট্রোক
– ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিবিলুপ্তি
– এপিলেপসি বা মৃগী রোগ
– আলঝেইমার্
– আটেইনশন ডিজঅর্ডার
– মস্তিষ্কের টিউমার
– মস্তিষ্কের ক্যান্সার
– পারকিনসন রোগ
– মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস
– স্লিপিং ডিজঅর্ডার
– স্লিপিং প্যারালাইসিস
– নিউরোমাসকুলার রোগ
উপরিউক্ত রোগ সমূহের মাত্রা,রোগ এর প্রকোপ এবং ধরণের উপর ভিত্তি করে যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তার মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো–
– ঔষধ সেবন ও প্রয়োগ
– সাইকোথেরাপি
– ফিজিওথেরাপি
– অস্ত্রোপাচার বা সার্জারি
কার্ডিওলজি / হৃদরোগ বিভাগ
কার্ডিয়াক শব্দের অর্থ হৃদপিন্ড বা হার্ট। বিভাগটি হৃদপিণ্ডের তথা হার্টের বিভিন্ন রোগ এর সমস্যা এবং তার সমাধান বা প্রতিকার নিয়ে কাজ করে। এই শাখাটি মূলত হার্টের রক্তসঞ্চালন, হার্টের গঠন এবং তার সমস্যার চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।
কার্ডিওলজি বিভাগের অন্তর্গত রোগ ও সমস্যা সমূহের মাঝে প্রধান প্রধানগুলি হলো:-
– জন্মগত হৃদরোগ
– করোনারি ধমনী রোগ
– হার্ট ফেইলিউর
– হার্টের ভালভের ত্রুটি
– রক্ত সঞ্চালনের বিঘ্নতা
– হার্টের ব্যাথা ইত্যাদি।
হার্টের সমস্যাই যেসমস্ত চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে তার মধ্যে কয়েকটি হলো :
– ইলেক্ট্রোকার্ডিগ্রাম
– কার্ডিয়াক মনিটরিং
– কার্ডিয়াক স্ট্রেস টেস্টিং
– ইলেক্ট্রোফিজিয়োলজি
– ই.সি.জি এবং ই.টি.টি
– হার্টের অপারেশন
– হার্টের রিং প্রতিস্থাপন
– ঔষধ সেবন
– প্রতিরোধ অর্থাৎ, হৃদপিণ্ডের যাবতীয় কার্যগত সমস্যা ও ত্রুটির সমাধান বা প্রতিকার করাটাই কার্ডিওলজি বা হৃদরোগ বিভাগের কাজ।
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলোজি এবং হেপাটোলজি
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলোজি এবং হেপাটোলজি (Gastroeterology & Hepatology):
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলোজি বিভাগটির পরিপাকতন্ত্র এর বিভিন্ন সমস্যা ও রোগ এর চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে। পরিপাকতন্ত্র হলো মুখগহব্বর থেকে শুরু করে পাকস্থলী, পরিপাকনালী হয়ে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত অংশসমূহের সমষ্টি। পরিপাকতন্ত্রের যেসব অংশ বিশেষভাবে উল্লেখ্য তা হলো :
– কিডনি
– পাকস্থলী
– অন্ত্র
– কোলন
– মলাশয়
– সিকাম
– এপেন্ডিক্স
হেপাটোলজি বিভাগের মূলত লিভার বা যকৃত, অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস, লালাগ্রন্থি ইত্যাদি অঙ্গ সমূহ এর চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এবং হেপাটোলজি বিভাগের উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা সমূহ :
– গেস্ট্রো ইন্টেস্টাইনাল বা আন্ত্রিক রোগ এবং তার ক্যান্সার।
– গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ।
– লিভার সিরোসিস
– জন্ডিস
– প্যাকরিয়াস বা অগ্নাশয়ের বিভিন্ন সমস্যা ও রোগ।
– স্টমাক বা পাকস্থলীর ক্যান্সার।
– কোলন ক্যান্সার।
– এপেন্ডিক্স অপারেশন।
– গলব্লাডার অপারেশন।
– পেপটিক আলসার।
ডার্মাটোলজি বা ত্বক ও চর্ম
গ্রিক ডার্মা অর্থ ত্বক বা চর্ম। এর থেকে ডার্মাটোলজি শব্দটি এসেছে। চিকিৎসাবিদ্যায় এই শাখা ত্বক, নখ ইত্যাদি দৈহিক অংশ এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা, রোগ এবং তার প্রতিকার নিয়ে কাজ করে থাকে।
এই বিভাগের বিশেষজ্ঞদের বলা হয় স্কিন স্পেশালিস্ট বা ডার্মাটোলজিস্ট ..
স্কিন বায়োপসিসটিস্ট দ্বারা সাধারণত রোগসমূহ শনাক্ত করা হয় :
ডার্মাটোলজি এর চিকিৎসার বিভিন্ন শাখাগুলি হলো :
– কসমেটিক সার্জারি।
– ডার্মাটো প্যাথলজী।
– ইমিউনো ডার্মাটোলজি।
– পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজি।
– টেলি ডার্মাটোলজি।
– ডার্মাটো ইউডেমিওলোজি।
– রেডিয়েশন থেরাপি।
চর্ম বিভাগের অন্তর্গত চিকিৎসা সমূহ :
– ত্বকের তুমার চিকিৎসা ও অপারেশন।
– ত্বক বা স্কিন ক্যান্সার
– ত্বকের আঁচিল, স্ফীতি, উপোমাংস, মোল বা তিল ইত্যাদি সমস্যার চিকিৎসা।
– লেজার ট্রিটমেন্ট দ্বারা ত্বকের অবাঞ্চিত লোম বা দাগ দূর করা।
– মাথার চুল ট্রান্সপ্লান্টেশন বা প্রতিস্থাপন।
– কোমোথেরাপির মাদ্ধমে ভেতরের ক্ষত এর চিকিৎসা।
– লেসার দ্বারা ত্বকের জন্মদাগ, অনাকাঙ্খিত যেকোনো দাগ, ট্যাটু মুছে ফেলা এবং ত্বকের উপরিভাগের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।
– ব্রণ, মেস্তা এবং রোদে পড়ার ত্বকের পরিচর্যা চিকিৎসা।
– ত্বকের এলার্জি চিকিৎসা।
– মাথার কালের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন : চুল পড়া, খুশকি, ত্বকের জ্বালাপোড়া অনুভূতি ইত্যাদি।
– স্কিন একজিমা।
– নখের ফাঙ্গাল ইনফেক্শন, নখ ভেঙে যাওয়া, নখ এর উপরিভাগ মরে যাওয়া, বিভিন্ন রজার চিকিৎসা।
এনেসথেশিয়া ও পেইন মেডিসিন
এনেসথেশিয়া মেডিকেল সাইন্স এর একটি পদ্ধতি যেক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ শরীর কিংবা শরীরের বিশেষ কোনো অংশকে সাময়িকভাবে অচেতন বা অজ্ঞান অর্থাৎ অনুভূতিশুন্য করা হয়।
সার্জারি বা অস্ত্রোপচার এবং ডেন্টিস্ট্রির ক্ষেত্রসমূহ তে বিশেষভাবে প্রয়োগ হয়। এটি ইনজেকশন এর মাধ্যমে শরীরে বিশেষ ঔষধ নির্ধারিত অংশে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। সাধারণত, এনেস্থিসিয়া করার প্রধান প্রধান কারণগুলি হলো :-
– অস্ত্রোপাচার বা সার্জারি।
– তীব্র বেথা।
– পেশী শিথিলকরণ তথা মাসল রিলাক্সেশন।
– এমনেশিয়া বা ষ্মৃতিভ্রষ্ট।
তিন ধরণের এনেস্থিসিয়া পদ্ধতি রয়েছে। যেমন :
1) সাধারণ অচেতন বা জেনারেল এনেস্থিসিয়া:
এই প্রক্রিয়ায় সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম কে দেহের বাকি অংশের সাথে পুরোপুরি আলাদা করে দেয় এবং শরীর সম্পূর্ণ অচেতন করে বা অজ্ঞান করে ফেলে।
2) সিডেশন বা অনুভূতিকরণ :
এটিও কেন্দ্রীয় স্নায়বিক প্রক্রিয়া তথা সেন্ট্রাল নারভাস সিস্টেম এর ওপর কাজ করে যা মস্তিষ্কের উত্তেজনা প্রশমন করে শান্ত করে। এটি দেহকে অচেতন না করে সম্পন্ন করা হয়।
3) রিজিওনাল বা লোকাল :
নির্ধারিত এই প্রক্রিয়ায় দেহের একটি নির্ধারিত অংশকে অচেতন বা অনুভূতিহীন তথা ব্যাথাশূন্য করার জন্য প্রয়োগ করা হয়।এই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় স্নায়ু প্রক্রিয়া বা সেন্ট্রাল নারভাস সিস্টেম এর সঙ্গে কাঙ্খিত অংশের অনুভূতি সংযোগ সাময়িক বিচ্চিন্ন করা হয়। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এবং দেহের বাকি অংশের সচেতন থাকে শুধু বিশেষ অংশটি ব্যাথাশূন্য হয়।
যে ধরণের ঔষধ সমূহ এই কাজে ব্যবহার করা হয় তা হলো :
– সাধারণ অচেতন করবার ঔষধ
– হিপনোটিক্স ঔষধ
– সিডেটিভ
– নিউরোমাসকুলার ব্লকিং মেডিসিন
– নার্কোটিক এবং এনালজেস্কিস
পেইন মেডিসিন (PAIN MEDICINE)
পেন মেডিসিন মূলত দেহের দীর্ঘকালীন ব্যথা কিংবা সাময়িক তীব্র ব্যাথা দূরীকরণ এবং নিরাময়ে কাজ করে। এই ক্ষেত্রটিতে বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ সেবাটি দিয়ে থাকেন। যেমন :
– ফার্মাসিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
– ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট
– ফিজিওলজিস্ট
– অকুপেশনাল থেরাপিস্ট
– ফিজিশিয়ান
– বিশেষজ্ঞ নার্স
নিম্নে কিছু ব্যাথার ধরণ উল্লেখ করা হলো যেসব ক্ষেত্রে ব্যথা মুক্তির ঔষধ তথা পেন মেডিসিন প্রয়োগ করা হয় :
– মাথা ব্যথা।
– মাইগ্রেন।
– মিন্সট্রুয়াল পেইন।
– রক্তক্ষরণ জনিত বেহাত।
– তীব্র ক্ষত, পোড়া ইত্যাদি ব্যথা।
– হাড় ভাঙা ব্যথা।
– খেলাধুলা, বেয়াম ইত্যাদি কারণে পেশী টান পড়ার ফলে সৃষ্টি ব্যথা।
– মাংসপেশিতে ব্যথা।
– অস্ত্রোপচার পরবর্তী ব্যথা।
– দাঁত ব্যথা, মাড়ি ব্যথা।
– কিডনির পাথরের কারণে সৃষ্ট ব্যথা।
– গ্যাস্ট্রিক এর ব্যথা।
– দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা।
– হাড়ক্ষয় এর জন্য ব্যথা।
– অর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা।
নেফ্রোলজি (কিডনি রোগ ও প্রতিকার)
নেফ্রোলজি শব্দটি এসেছে গ্রীক * থেকে যার অর্থ কিডনি। এই শব্দটি সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালে ব্যবহৃত হয়। মেডিক্যাল সায়েন্স এ এই শাখা টি কিডনির বিভিন্ন সমস্যা, রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে কাজ করে।
কিডনি দেখতে কিছুটা বিন এর আকৃতি। স্বাভাবিকভাবে একটি মানুষ এর দেহে দুইটি কিডনি থাকে। এরা এক একটি ১১ সে মি (৪.৩ ইঞ্চি)দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
কিডনি একজোড়া রেনাল / বৃক্কীয় ধমনী থেকে রক্ত সংগ্রহ করে এবং ফিল্টার করে পুনরায় বৃক্কীয় শিরায় নির্গমন করে দেয। প্রতিটি কিডনি একটি মূত্রনালীতে সংযুক্ত থাকে অবশেষে মূত্রথলি বা ব্লাডার এ উপনীত হয়।
প্রতিটি কিডনি যেসব সুনির্দিষ্ট কাজ করে থাকে :
– পরিস্রাবন বা ছাকন
– পুনরায় শোষণ
– নিঃস্বরণ
– রেচন
নিম্নে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা সমূহ এবং কি কি রোগ হতে পারে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো :
– কিডনির পাথর
– ক্যান্সার
– ডায়াবেটিক এর কারণে কিডনির সমস্যা
– ইউরিন নিষ্ক্রমণ এর সমস্যা
– কিডনির ইনফেকশন
– হেমাটোরিয়া
– ফিস্টুলা
– ক্রনিক কিডনি রোগ
– নেফ্রোটিকস
– রেনাল সিস্ট
– মূত্রাশয় পাথর
কিডনি রোগ এর বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা :
– কিডনির ডায়ালাইসিস
– কিডনির বায়োপসি
– কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন /প্রতিস্থাপন
– ঔষধ সেবন
– ইমিউনো সাপ্রেশন
– ইনটেনসিভ কেয়ার
– ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি, পেরিওপিটিভি মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন
– প্লাজমা এক্সচেঞ্জ
ই এন টি (নাক, কান, গলা)
মেডিকেল সায়েন্স এ এই বিভাগটি নাক কান ও গলার বিভিন্ন সমস্যা ও রোগ এর চিকিৎসা নিয়ে কাজ এবং পর্যালোচনা করে। এছাড়াও মাথা ও ঘাড়। এর প্রথমাংশ এর রোগসমূহের নিরাময়ে কাজ করে। সাধারণত নাকের পলিপ, কানের শ্রবণশক্তি এবং মাথার খুলির ক্যান্সার, মাথা ও ঘাড় এর টিউমার এর অস্ত্রোপচার বা সার্জারি এই শাখার বিশেষ চিকিৎসাসেবা।
এই বিভাগের বিশেষজ্ঞদের ইএনটি স্পেশালিস্ট, ইএনটি ডক্টর বা ইএনটি সার্জন / Otorhinolarygologists বলা হয়। ENT বিভাগের চিকিৎসা ক্ষেত্র এবং রোগ সমূহ নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায় :
Head and Neck oncology:
– মাথা ও ঘাড় এর ক্যান্সার
– মুখের ক্যাভিটি ,ফ্যারিংস ,ল্যারিংস এর কোষের ক্যান্সার
– থাইরয়েড ক্যান্সার
– মাথা ও ঘাড় এর অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির সার্জারি
– খুলির বেজ সার্জারি
– লালা গ্রন্থি বা স্যালিভারি গ্রন্থি সার্জারি
Otology and Neurotology:
– মাথা ঘোরা সমস্যার চিকিৎসা
– শ্রবণশক্তি হারানো ও শ্রবণ সমস্যার চিকিৎসা
– কানের ভেতরের অংশের ও বাহিরের অংশের জ্বালাপোড়া
– কানের পর্দায় ছিদ্র
– ইনফেকশন
– কানে রক্তক্ষরণ
– দুর্ঘটনা , বিস্ফোরণ বা উচ্চ শব্দের কারণে কানের পর্দা ফেটে যাবার জন্য চিকিৎসা এবং
– কানের বিভিন্ন সার্জারি
Rhinology:
এই শাখাটির প্রধান বিষয় নাকের কার্যকরহীনতা,নাকের যে কোনো সমস্যা এবং সাইনাস এর রোগ ও তার প্রতিকার। নিম্নে এর অন্তর্গত সমস্যা সমূহ উল্লেখ করা হলো —
– নাকের ভেতরে কোন বাধা বা পলিপ
– তীব্র ও দীর্ঘকালীন সাইনুসাইটিস
– পরিবেশগত এলার্জি
– পিটুইটারি টিউমার
– খালি নাক সিনড্রোম *রায়্যুনিটিস
Laryngology:
এটি হলো সেই বিভাগ যেখানে ভোকাল বা কণ্ঠস্বর বা গলার বিভিন্ন অংশ এর রোগ ও তার সমাধান নিরুপন ও নিরাময় করা হয়।
এই শাখায় যেসব ত্রুটি নিয়ে করা হয় তা নিমরুপ :
– পর্যালোচনা বাকযন্ত্র তথা কথা বলার জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গ প্রতঙ্গের গঠন সমস্যা
– কথা বলতে না পারা, তোতলানো।
– কণ্ঠনালির ক্যান্সার।
– গলার টিউমার।
– গলগন্ড।
– ল্যারিং গিটিস।
– ভোকাল কর্ড নুডুলস সমস্যা।
এছাড়াও যেসব চিকিৎসা এর অন্তর্ভুক্ত :
– নাকের হাড় ভাঙা
– ম্যান্ডিবল বা চোয়াল ভাঙা
– সামনের সাইনাস
– উপরিউক্ত অঙ্গ সমূহের কোমল কোষের ক্ষতি
চক্ষু বিভাগ
Ophthalmology বা চক্ষু বিভাগ এ চোখের গঠন এবং বিভিন্ন অংশের যেমন : লেন্স, কর্নিয়া, রেটিনা, চোখের মনি প্রভৃতির যাবতীয় কার্যকলাপ ও সমস্যা, রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ ও প্রতিকার ইত্যাদি নিয়ে চিকিৎসাসেবা ও দিয়ে থাকে। চোখের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রোগ হলো :
* অন্ধত্ব
* চোখে কম দেখা
* চোখের ছানি
* মাস্কুলার ডিজেনারেশন বা চোখের অবক্ষয়
* গ্লুকোমা
* কনজাংটিভার ভাইরাস
* চক্ষের ব্যাথা
* চোখ দিয়ে পানি পড়া
* চোখ এর অশ্রুগ্রন্থি কাজ না করা
* চোখ পিটপিট করা
* হ্রস্ব দৃষ্টি
* দূর দৃষ্টি
* চোখের এলার্জি
চোখের রোগ সমূহ দুটি প্রধান উপায়ে নিরুপন করা হয় –
১. চাক্ষুষ ক্ষেত্রের পরীক্ষা/ভিজুয়াল ফিল্ড টেস্ট এবং
২. অপথালমোস্কোপি
চোখের চিকিৎসার প্রকারভেদ :
– সার্জারি বা অস্ত্রোপচার
– ঔষধ সেবন ও প্রয়োগ
– লেজার থেরাপি
– লেন্স বা চশমা ব্যবহার
– চোখের ড্রপ প্রয়োগ ও প্রতিরোধ
চোখের সার্জারী বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে, যেমন :-
* লেজার সার্জারি
* ছানি অপারেশন
* গ্লুকোমা সার্জারি
* এন্টিরিয়র সেগমেন্ট সার্জারি
* রেটিনা সার্জারি
* চোখ প্রতিস্থাপন
* প্রতিবন্ধক অপসারণ
* কর্নিয়া সার্জারি
* ভিট্রো -রেটিনাল সার্জারি
* চোখের আকার ও পেশির সার্জারি
* চক্ষুর অপসারণ সার্জারি